এম সি ইউ এর পঞ্চম মুভিটি হলো ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ ( দ্যা ফার্স্ট এভেন্জার )। মুভিটি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়। এই মুভিটির গল্প স্টিভ রজার্স নামের একজন দুর্বল এবং অসুস্থ ছেলের যে কিনা তার দুর্বলতাকে হার মানিয়ে একজন শক্তিশালী হিরো হয়ে ওঠে। এটি একটি সাইন্স ফিক্শন বা কল্পবিজ্ঞান মুভি।
ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ ( দ্যা ফার্স্ট এভেন্জার ) মুভি ব্যাখ্যাঃ স্টিভ রজার্সের জীবনের গল্প
ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ ( দ্যা ফার্স্ট এভেন্জার ) মুভিটির গল্প দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়কার। যখন জার্মানিতে হিটলারের রাজত্ব ছিল। ১৯৩৪ সালে জোহান স্মিড নামের একজন জার্মান বিজ্ঞানী আডল্ফ হিটলারের সাথে দেখা করে। হিটলার তার নিজের সৈনিকদের অস্ত্র তৈরি করার জন্য স্মিডকে তার নিজের দলে নিয়ে নেয়। হিটলারের দলে থাকাকালীন স্মিড হাইড্রা নামে একটি অর্গানাইজেশন শুরু করে। হাইড্রার কাজ ছিল জার্মান আর্মিদের জন্য উন্নত মানের অস্ত্র তৈরি করা।
জোহান স্মিড সাইন্স ও টেকনোলজির পাশাপাশি মিথোলজি ও ম্যাজিক এর মধ্যেও তার আকর্ষণ ছিল। তার মতে এ পৃথিবীতে এমন কিছু শক্তি আছে যেগুলো গড অর্থাৎ দেবতারা ব্যবহার করেছিলো। যদি স্মিড সেই শক্তি অর্জন করতে পারে তাহলে সে খুব সহজেই যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারবে। কিন্তু স্মিড এটাও জানতো যে কেবল শক্তিশালী লোক ওই ক্ষমতা বা শক্তি অর্জন করতে পারবে। এই জন্য সে নিজেকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিল।
১৯৪০ সালে জোহান স্মিড আব্রাহাম এরস্কিন নামের এক বিজ্ঞানীকে কিডন্যাপ করে। ডঃ এরস্কিন জার্মানির একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। সে এমন একটি সিরাম তৈরি করে যেটা একজন মানুষকে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে অনেক শক্তিশালী করতে পারে। যদিও সেই সিরামটি পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয়নি। কিন্তু তার পরেও স্মিড ডঃ এরস্কিনের থেকে সেই সিরামটি কেড়ে নিয়ে নিজের শরীরে প্রয়োগ করে। এতে স্মিড শক্তিশালী হয়েছিল কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকও ছিল যার ফলে তার মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়।
এই জন্য তাকে রেড স্কাল বলে ডাকাতো। স্মিড তার ভয়ানক মুখ লুকানোর জন্য সে তার নিজের মুখের আকৃতির একটি মুখোশ পরে। স্মিড নর্স মিথোলজি অধ্যয়ন করে যার ফলে সে টেসারেক্ট কিউব সম্পর্কে জানতে পারে। টেসারেক্ট কিউব হলো একটি শক্তিশালী ইনফিনিটি স্টোন। অনেক সন্ধান করার পরে স্মিড ১৯৪২ টেসারেক্ট কিউবটি খুজে পায়।
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব চলতে থাকে। নিউ ইয়র্ক শহরে স্টিভ রজার্স নামের একজন ছেলে আর্মিতে ভর্তি হতে চেয়েছিল। স্টিভ রজার্স ছিল একজন দেশ প্রেমিক। সে শারীরিক দিক থেকে অনেক দুর্বল ছিল। তাই সে আর্মিতে ভর্তি হতে পারে না। তার পরেও স্টিভ তার দেশের জন্য লড়াই করতে চায়। এই জন্য সে অনেক বার আর্মিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। একদিন এমনি এক ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় সে তার বন্ধুর সাথে কথা বলছিল তখন ডঃ এরস্কিন তাদের সব কথা শুনে ফেলে।
আব্রাহাম এরস্কিন যে কিনা এখন ইউ এস সরকারের জন্য কাজ করে সে স্টিভের দেশের প্রতি এত ভালবাসা দেখে তাকে আর্মির ভর্তি পরীক্ষাতে পাস করিয়ে দেয়। ডঃ এরস্কিনের সেই সিরাম যেটা ব্যবহার করে স্মিড শক্তিশালী হয়েছিল সেটা এখন পুরোপুরি সঠিক ভাবে তৈরি হয়েছে। এই সিরামটি পরীক্ষা করার জন্য ডঃ এরস্কিন এমন এক বেক্তির খোজ করে যে কিনা সেই শক্তি খারাপ কাজে ব্যবহার না করে। স্টিভ রজার্সের এর ভালো গুন, কঠোর পরিশ্রম ও তার সাহসিকতা দেখে ডঃ এরস্কিন তাকে সেই সিরাম দেওয়ার সিদ্ধান্তে নেয়।
অন্যদিকে রেড স্কাল অর্নিম জোলা নামের একজন বিজ্ঞানীর সাহায্যে এমন একটি মেশিন তৈরি করে যেটা টেসারেক্ট কিউবের শক্তি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। রেড স্কাল সেই শক্তিকে ব্যবহার করে অনেক ভয়ানক অস্ত্র তৈরি করে। আর স্মিড তার ব্রাঞ্চ হাইড্রা হিটলার এর দল থেকে আলাদা করে ফেলে। স্মিড হিটলারের বিরুদ্ধে চলে যায়। সে পুরো দুনিয়াতে একাই রাজত্ব করতে চেয়েছিল।
রেড স্কাল যখন জানতে পারে ডঃ এরস্কিন নিউ ইয়র্কে আছে এবং সে সেখানের সৈনিকদের সুপার সোলজার সিরাম দিবে তখন রেড স্কাল তাকে মারার জন্য সেখানে একজন লোক পাঠায়। ডঃ এরস্কিন হাওয়ার্ড স্টার্ক এর সাথে মিলে তার পরীক্ষা শুরু করে। যখন স্টিভের শরীরে সেই সিরামটি প্রয়োগ করা হয় তখন স্টিভ সম্পূর্ণ বদলে যায় এবং সে অনেক শক্তিশালী হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে হাইড্রার লোক ডঃ এরস্কিনকে মেরে সেখান থেকে অবশিষ্ট সিরামটি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
স্টিভ তার নতুন শক্তির মাধ্যমে সেই লিকটিকে ধরে ফেলে। কিন্তু সেই লিকটি ভয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে। সেই সিরামটিও পরে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। স্টিভ রজার্স এখন একজন সুপার সোলজার হয়ে যায়। কিন্তু ইউ এস আর্মিদের শুধু একজন না এই রকম অনেক সুপার সোলজারের প্রয়োজন ছিল। ডঃ এরস্কিন ও তার সিরাম না থাকায় এখন আর কেউ সুপার সোলজার হতে পারবে না।
আর্মির লোকেরা স্টিভকে ছেরে চলে যায়। যাতে বিজ্ঞানীরা তাকে পরীক্ষা করে সেই সিরাম আবার তৈরি করতে পারে। আর যতক্ষণ সেই সিরামটি তৈরি না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত স্টিভকে একটি নতুন কাজ করতে বলা হয়। স্টিভকে ক্যাপ্টেন আমেরিকা নাম দিয়ে ওয়ার বন্ডস বিক্রি করার কাজে লাগিয়ে দেয়। যাতে করে যুদ্ধের জন্য টাকা জড়ো করা যায়। স্টিভ রজার্স ক্যাপ্টেন আমেরিকা নামে একজন বিখ্যাত সেলিব্রিটি হয়ে যায়।
কিন্তু তার এই কাজ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। সে যুদ্ধের ময়দানে সত্যিকারের লড়াই করতে চেয়েছিল। স্টিভ ইতালিতে এমনি এক কনসার্টে গিয়েছিলো। সেখানে সে জানতে পারে তার বন্ধু বাকি বার্ন্স হাইড্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলো এবং তখন থেকে তাকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্টিভ তার বন্ধু বাকি বার্ন্সকে খুজতে একাই হাইড্রার এলাকাতে চলে যায়। সেখানে সে তার বন্ধুকে সহ আরও অনেক সৈনিকদের সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
রেড স্কাল যখন দেখে তার সৈনিক দুর্বল হয়ে পরছে তখন সে নিজেই তার সেই গুপ্ত স্থানটি বোম দিয়ে সব ধ্বংস করে দেয়। যাতে শত্রুরা তার গোপন তথ্য নিতে না পারে। তখন রেড স্কাল এবং অর্নিম জোলা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। স্টিভ সব সৈনিকদের সেখান থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে। স্টিভের এই সাহসিকতার জন্য তাকে আর্মিতে যুক্ত করে ক্যাপ্টেন বানিয়ে দেয়।
তারপরে স্টিভ হাওয়ার্ড স্টার্কের থেকে নতুন শিল্ড ও সুট নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে যায়। স্টিভ কিছু সৈনিকদের নিয়ে নিজের একটি দল গঠন করে হাইড্রার অনেক গুলো এলাকা ধ্বংস করে ফেলে। ১৯৪৫ সালে ইউ এস আর্মি অর্নিম জোলার ঠিকানা খুজে পায়। ক্যাপ্টেন তাকে আটক করার জন্য একটি চলন্ত ট্রেনে উঠে। তারা অর্নিম জোলাকে আটক করতে সক্ষম হয় কিন্তু বাকি বার্ন্স সেই ট্রেন থেকে নিচে পরে যায়।
ডঃ জোলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে জানা যায় রেড স্কাল আমেরিকার বড় বড় শহরে বোমা হামলা করবে। এই জন্য তাকে আটকাতে স্টিভ রজার্স তার সৈনিকদের নিয়ে হাইড্রার হেডকোয়ার্টারে চলে যায়। কিন্তু রেড স্কাল একটি প্লেন বোম রেখে এবং টেসারেক্ট কিউব নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। রেড স্কালকে আটকানোর জন্য ক্যাপ্টেন সেই প্লেনে ডুকে যায়।
সেখানে যখন তাদের মধ্যে লড়াই হয় তখন সেখানে থাকা টেসারেক্ট কিউবের কন্টেইনার খারাপ হয়ে যায়। আর যখন রেড স্কাল টেসারেক্ট কিউবটিকে নিজের হাতে নেয় তখন একটি ওয়ার্ম হোলের মধ্য দিয়ে অন্য একটি গ্রহে টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে চলে যায়। রেড স্কালের খারাপ উদ্দেশ্যের কারনে সে একটি অভিসাপ পায় এবং সে ভরমির নামে একটি গ্রহে আটকা পরে যায়।
রেড স্কাল চলে যাওয়ার পরে টেসারেক্ট কিউবটি প্লেন থেকে নিচে পরে যায়। তখন ক্যাপ্টেন একা নিউক্লিয়ার বোম সহ সেই প্লেনে ছিল। প্লেনটি শহরে অবতরণ করা অসম্ভব ছিল। তাই ক্যাপ্টেন সেই প্লেনটিকে অনেক দূরে আর্কটিকে ল্যান্ড করায়। বরফের সেই পাহাড়ে প্লেনটি বরফে জমে যায় এবং বোম কাজ করা বন্ধ করে দেয়। প্লেনের সাথে সাথে ক্যাপ্টেন আমেরিকাও বরফে জমে গিয়েছিলো। সরকার অনেক খুজা খুজির পরে টেসারেক্ট কিউবটিকে খুজে পায় কিন্তু ক্যাপ্টেন আমেরিকাকে কোথাও খুজে পায় না।
৬৬ বছর পরে অর্থাৎ ২০১১ সালে আর্কটিকের কিছু বিজ্ঞানী সেই প্লেনটিকে খুজে পায়। প্লেনের ভিতরে তারা ক্যাপ্টেন আমেরিকার বরফে জমানো শরীর খুজে পায়। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এতো বছর বরফে জমে থাকার পরেও ক্যাপ্টেন আমেরিকা মারা যায়নি। সুপার সোলজার সিরামের জন্য এত বছর বরফে জমে থাকার পরেও ক্যাপ্টেন আমেরিকার মরে যায়নি এবং তার বয়সও বৃদ্ধি পায়নি। শিল্ডের লোকেরা ক্যাপ্টেনের দেখা শুনার দায়িত্ব নেয়।
তারা ক্যাপ্টেনকে ঠিক করে এমন এক হাসপাতালে রাখে যেখানের পরিবেশ ১৯৪০ এর মতো ছিল। যাতে ক্যাপ্টেনের যখন জ্ঞান ফিরবে তখন সে নতুন প্রজন্ম দেখে ভয় না পায়। কিন্তু যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন সে সব কিছু বুঝে যায়। ক্যাপ্টেন যখন সেখান থেকে বের হয়ে আসে তখন সে সম্পূর্ণ এক নতুন দুনিয়া দেখতে পায়। তখন শিল্ডের পরিচালক নিক ফিউরি স্টিভকে বলে প্রায় ৭০ বছর ধরে তার কোন জ্ঞান ছিল না।
ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ ( দ্যা ফার্স্ট এভেন্জার ) মুভির শেষে পোস্ট ক্রেডিট সিনে শিল্ডের পরিচালক নিক ফিউরি স্টিভের সাথে দেখা করতে আসে। নিক স্টিভকে বলে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে ক্যাপ্টেন আমেরিকার প্রয়োজন। তার পরে দ্যা এভেন্জার্স মুভির কিছু সিন দেখা যায়।