যে সময়টাতে সুপার ম্যান, ব্যাটম্যান, স্পাইডার-ম্যান এর মতো সুপার হিরো বিখ্যাত ছিলেন, সেই সময়ে এমন এক সুপার হিরোর মুভি আসে যাকে কেউ ঠিকভাবে জানতো না। আর এই বর্তমান সময়টাতে সবাই এই সুপার হিরোর অনুসরণকারী বা ফ্যান। সকল সুপার হিরো ফ্যানরা এই মুভির মূল ক্যারেক্টারকে খুব ভালো করে চিনে। এম সি ইউ অর্থাৎ মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের সর্বপ্রথম মুভিটিই হলো আয়রন ম্যান মুভি। আয়রন ম্যান মুভিটি ২০০৮ সালে মুক্তি পায়।
আয়রন ম্যান মুভি সম্পর্কে ব্যাখ্যাঃ
এই মুভিটির কাহিনি হলো টনি স্টার্ক নামে একজন ধনী বেক্তির। টনি ছোটবেলা থেকেই জিনিয়াস ছিল। সে অনক ছোট বয়সেই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে। টনির বাবা হাওয়ার্ড স্টার্ক একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। হাওয়ার্ড স্টার্ক ইউ এস আর্মিদের জন্য হাতিয়ার তৈরি করতো। টনির বয়স যখন ২১ বছর তখন তার বাবা-মা একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তখন টনি ও তার বাবার বন্ধু ওবাদিয়া স্টেন দুজনে মিলে কোম্পানি সামলায়। টনি নিজের কোম্পানি স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিসের মালিক ছিলো। ওবাদিয়া স্টেন ছিল সেই কোম্পানির ম্যানেজার।
টনি নিজের দেশের জন্য অনেক ভালো ভালো হাতিয়ার তৈরি করে। একবার টনি আফগানিস্তান গিয়েছিলো আর্মিকে তার জেরিকো মিসাইলের প্রদর্শন দেখানোর জন্য। সেখান থেকে ফেরার পথে টনির উপরে হামলা হয়। টনির সামনে তার নিজের কোম্পানির একটি বোমা এসে পরে এবং বোমটি ফাটার পরে সেই বোমের তুকরা টনির বুকের ভেতরে চলে যায়।
পরে যখন টনি জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে দেখতে পেল সে একটা গুহার ভিতরে আছে। টনি বুকে অদ্ভুত একটি মেশিন লাগানো থাকে। গুহাতে টনির সাথে ইনসেন নামে একজন লোক থাকে। ইনসেন টনিকে বলে সে তার বুক থেকে বোমের তুকরা গুলো বের করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু বোমের তুকরা গুলো হৃদপিন্ডের কাছাকাছি ছিলো বলে ইনসেন সব তুকরা বের করতে পারেনি। বোমের তুকরা গুলো যাতে টনির হৃদপিন্ডে পৌছাতে না পারে এর জন্য ইনসেন টনির বুকে একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেট লাগিয়ে দেয়। সেই ইলেক্ট্রোম্যাগনেট একটি গাড়ির ব্যাটারিতে চলছিল।
ইনসেন টনিকে বলে তারা সন্ত্রাসীদের অধীনে বন্ধি আছে এবং তারা এমন এক স্থানে আছে যেখানে কেউ তাদের খুজে পাবে না। সন্ত্রাসীরা টনিকে বলে যদি সে তাদের জেরিকো মিসাইলটি বানিয়ে দেয় তাহলে তারা টনিকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু টনি জানতো যে সন্ত্রাসীরা শেষ পর্যন্ত তাকে মেরে ফেলবে। এই জন্য সে মিসাইল বানানোর অজুহাতে সেখান থেকে পালানোর পরিকল্পনা করে।
ওই সন্ত্রাসীদের কাছে স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিসের সব ধরনের হাতিয়ার ছিলো। টনি সেই হাতিয়ার এর সাহায্যে একটি আর্ক রিয়েক্টর তৈরি করে। আর্ক রিয়েক্টর ইলেকট্রিক জেনারেট করার একটি যন্ত্র। এটির আবিষ্কার টনির বাবা করেছিলো। টনির বাবা একটি বড় আর্ক রিয়েক্টর বানিয়েছিল যেটার মাধ্যমে তার ফ্যাক্টরিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হতো। টনি সেই আর্ক রিয়েক্টরের ডিজাইন অনুযায়ী একটি ছোট আর্ক রিয়েক্টর তৈরি করে যেন সে ওই আর্ক রিয়েক্টরটি তার বুকে লাগাতে পারে। এই আর্ক রিয়েক্টরে প্রচুর শক্তি ছিলো যার সাহায্যে টনি তার বুকের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটকে বছরের পর বছর চালাতে পারবে। কিন্তু টনি এই রিয়েক্টর কেবল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটকে চালানোর জন্য তৈরি করেনি। টনি এই রিয়েক্টরটিকে অন্য কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
ইনসেনের সাথে মিলে টনি একটি মেকানিক্যাল আর্মার তৈরি করে। আর্মারটিকে তার আর্ক রিয়েক্টরের মাধ্যমে পাওয়ার দেয়। এই আর্মারটির সাহায্যে টনি সেখান থেকে পালাতে চেয়েছিল। যখন টনি সেই আর্মার বা সুট তৈরি করে এবং আর্মারটি পরতে থাকে তখন সেখানে থাকা সন্ত্রাসীরা তাদের সন্দেহ করে এবং তাদের উপরে হামলা করে। কিন্তু ইনসেন টনিকে বাঁচানোর জন্য তার নিজের জীবন দিয়ে দেয়।
টনি তার আর্মার বা সুটের মাধ্যমে কিছু সন্ত্রাসীদের মেরে ফেলে এবং তাদের সব হাতিয়ার ধ্বংস করে সেখান থেকে চলে আসে। টনি অনেক দূরে এক মরুভূমিতে এসে পরে এবং তার সুট চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এর পরে টনির বন্ধু জেমস রহডস যেকিনা একজন আর্মি অফিসার সে টনিকে খুজে বের করে এবং তাকে নিউ ইয়র্ক নিয়ে আসে। নিউ ইয়র্ক ফিরে এসে টনি সবার সামনে ঘোষণা করে যে এখন থেকে স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিস আর কোন হাতিয়ার তৈরি করবে না।
কারণ এই হাতিয়ারের খারাপ কাজে ব্যবহার করা হয়। টনির এই সিদ্ধান্তে ওবাদিয়া স্টেন ও কোম্পানির সকলে টনির উপরে রাগ করে। কিন্তু তার পরেও টনি তার সিদ্ধান্তে অটুট থাকে। টনি অস্ত্র তৈরি করা বন্ধ করে রূপান্তর যোগ্য শক্তির উৎস এবং তার আর্ক রিয়েক্টরের ওপরে আরও পরীক্ষা করতে থাকে।
টনি তার বুকের সেই ছোট আর্ক রিয়েক্টরটিকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখে যেন কেও তার সেই আর্ক রিয়েক্টর কোন খারাপ কাজে ব্যবহার না করতে পারে। পরে সে একটি নতুন এবং আরও শক্তিশালী আর্ক রিয়েক্টর তৈরি করে সেটিকে তার বুকে লাগায়। এর পরে টনি কয়েক মাস তার ঘরে থেকে একটি নতুন এবং উন্নত আর্মার বা সুট তৈরি করে যেটাকে সে তার নতুন আর্ক রিয়েক্টরের মাধ্যমে শক্তি দেয়। টনি এই নতুন সুট তৈরি করেছিলো নিজের সুরক্ষা এবং খারাপ লকেদের দূর করার জন্য।
কিছু দিন পরে টনি একটি চ্যারিটি ইভেন্ট এ আসে। সেখানে একজন রিপোর্টারের কাছ থেকে সে জানতে পারে যে এখনো তার কোম্পানির হাতিয়ার সন্ত্রাসীদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা একটি গ্রামের লোকদের ওপরে অত্যাচার করছে। তখন টনি তার নতুন আর্মার পরে আফগানিস্তানের সেই গ্রামের চলে যায়। সেখানে সন্ত্রাসীদের মেরে তাদের হাতিয়ার নষ্ট করে ফেলে এবং গ্রামের লোকদের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করে।
অন্যদিকে ওবাদিয়া স্টেন সেই লোকদের সাথে দেখা করে যারা টনিকে অপহরণ করে রেখেছিল। আসলে ওবাদিয়া স্টেন এই সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে টনিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই সন্ত্রাসীরা ওবাদিয়া স্টেনের সাথে প্রতারণা করেছিলো। তাই ওবাদিয়া স্টেন সব সন্ত্রাসীদের মেরে ফেলে। সে তাদের থেকে টনির পুরাতন আর্মার ও এর নকশা নিয়ে যায়।
টনি তার অ্যাসিস্ট্যান্ট পেপার পটসকে তার কোম্পানির মেইন কম্পিউটার চেক করতে বলে যাতে সে অবৈধভাবে বিক্রি করা হাতিয়ারের তথ্য জানতে পারে। যখন পেপার সেই কম্পিউটার চেক করে তখন সে জানতে পারে ওবাদিয়া স্টেন লুকিয়ে লুকিয়ে খারাপ লোকেদের কাছে হাতিয়ার বিক্রি করে। সে আরও জানতে পারে ওবাদিয়া স্টেন টনিকে মারার চেষ্টা করেছিলো যাতে সে কোম্পানির মালিক হতে পারে। পেপার এই সব তথ্য নিজের কাছে জমা করে এবং সে শিল্ডের এজেন্ট ফিল কোলসনকে সব কিছু বলে দেয়।
ওবাদিয়া স্টেন টনির পুরাতন আর্মার এর নকশা ব্যবহার করে নিজের জন্য একটি নতুন আর্মার তৈরি করে। কিন্তু সেই সুটকে চালানোর জন্য আর্ক রিয়েক্টর তৈরি করতে পারে না। এর জন্য সে টনির বাসায় গিয়ে তাকে কিছু সময়ের জন্য প্যারালাইস করে তার কাছ থেকে আর্ক রিয়েক্টর কেড়ে নিয়ে আসে এবং সে ওই আর্ক রিয়েক্টরটিকে তার আর্মারে লাগিয়ে সেটিকে চালু করে।
টনি কোনভাবে তার পুরাতন আর্ক রিয়েক্টরের কাছে পৌছায় এবং সেটিকে তার বুকে লাগিয়ে নেয়। এই পুরাতন আর্ক রিয়েক্টরটি এতোটা ভালো ছিলো না যে তার নতুন সুটটিকে পাওয়ার দিতে পারে। তার পরেও টনি তার সুট পরে ওবাদিয়া স্টেনকে আটকানোর জন্য চলে যায়। অন্য দিকে পেপার শিল্ডের এজেন্টের সাথে ওবাদিয়া স্টেনকে গ্রেফতার করার জন্য যায়। কিন্তু ওবাদিয়া স্টেন তার সুট পরে সবার উপরে আক্রমণ করে।
তখন টনি সেখানে পৌছায়। টনি তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু টনির সুটে পুরনো আর্ক রিয়েক্টর লাগানো থাকায় টনি তার সামনে দুর্বল হয়ে পরে। এর জন্য টনি তাকে তার কোম্পানির ছাদে নিয়ে আসে যেখানে সেই বড় আর্ক রিয়েক্টরটি ছিলো। টনি পেপার এর সাহায্যে আর্ক রিয়েক্টরকে ওভারলোড করে। যার ফলে ওবাদিয়া স্টেন মারা যায়।
তার পরের দিন স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিসে একটি প্রেস কনফারেন্স হয় সেখানে সবাই সেই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চায়। শিল্ডের লোক টনিকে মিডিয়ার সামনে মিথ্যা কথা বলতে বলে। কিন্তু টনি সবাইকে বলে দেয় সে আয়রন ম্যান।
মুভির শেষে পোস্ট ক্রেডিট সিনে দেখা যায় শিল্ডের পরিচালক নিক ফিউরি টনিকে বলে যে এই পৃথিবীতে সে একাই সুপার হিরো না। তার মতো আরও সুপার হিরো আছে। নিক ফিউরি টনির সাথে সুপার হিরোর একটি দল তৈরি করার কথা বলে।